ঢাকা, ২০২৪-০৪-২৫ | ১১ বৈশাখ,  ১৪৩১

বাংলাদেশে ব্যবসা খুঁজছে কাতার

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এরই অংশ হিসেবে এ দেশে সম্ভাবনাময় ব্যবসা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের উদীয়মান গন্তব্য বলেও উল্লেখ করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও কাতারের শীর্ষ পর্যায়ের  বৈঠক হয়। বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে সই হয় ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে দু’দেশের দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা ও শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তারা এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে উভয় দেশের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। দু’পক্ষই গাজায় ইসরায়েলি হামলা, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা অস্থিরতা ও সহিংসতা নিয়ে দুই শীর্ষ নেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তারা ফিলিস্তিন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে বৈশ্বিক নেতাদের প্রতি আহ্বান।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের জ্ঞানভিত্তিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক সমাজ ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। তিনি আমিরের নেতৃত্বে বহুপক্ষীয় কূটনীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক সংকট সমাধানে কাতারের মধ্যস্থতারও প্রশংসা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
কাতারের আমির এ সময় শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান বিনিয়োগের গন্তব্য উল্লেখ করে তিনি দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। কাতারের আমির বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় ব্যবসা খুঁজতে আগ্রহের কথাও বৈঠকে প্রকাশ করেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করেন শেখ তামিম। বিশেষ করে কাতারের উন্নয়নে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা এবং দু’দেশের অর্থনীতিতে অবদানের বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক, পেশাজীবী, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের বিষয় বিবেচনার অনুরোধ জানান। অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন কাতারের আমির।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে ব্যবসায়ীদের কাতারের ভিসা সহজীকরণের আহ্বান জানায় ঢাকা। এ সময় পর্যটন খাতের উন্নয়নে কক্সবাজারে কাতারের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সম্ভাবনা খুঁজে দেখার পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। কক্সবাজার ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান কাতার আমির। বৈঠকে দু’দেশ বিদ্যমান জ্বালানি সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অংশীদারত্ব পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

এর আগে সকালে কাতারের আমির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে (পিএমও) পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাইগার গেটে তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এর পর তারা একান্ত বৈঠক করেন। শুরু হয় দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কাতার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আমির শেখ তামিম। বৈঠক শেষে দু’দেশের মধ্যে পাঁচটি করে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ত্যাগ করার আগে কাতার আমির টাইগার গেটে দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন। এর পর তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সন্ধ্যায় কাতারের আমির একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে দু’দিনের সফরে সোমবার ঢাকা পৌঁছান কাতার আমির।

১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও কাতারের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে সই হওয়া চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে– দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় সমুদ্র পরিবহন, দু’দেশের মধ্যকার পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং বাংলাদেশ-কাতার যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা। আর সই হওয়া ৫ সমঝোতা স্মারক হলো– জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।

বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি দু’দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি দুই রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তিতে সই করেন। কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন-সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কিউসিসিআই) চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি দু’জন বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকেও সই করেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম) ক্ষেত্রে সহযোগিতা-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ ছাড়া বন্দরের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে ঢাকার একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে মিরপুরের কালশী এলাকার বালুর মাঠে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কাতারের আমিরের নামে। এখন থেকে রাস্তা ও পার্কটি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অ্যাভিনিউ এবং শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়