কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বললেন
সাহিত্য একাডেমির এই আসরে আমার গুরু শহীদ কাদরি আছেন
বেনিজর শিকদার
স্বরচিত পাঠ, আলোচনা ও আবৃত্তির মধ্যদিয়ে ৩১শে মে, শুক্রবার ২০২৪- সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র নিয়মিত আয়োজন, মাসিক সাহিত্য আসর। আসরটি পরিচালনায় ছিলেন, একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।
এবারের আসরে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আবৃত্তিশিল্পী পারভীন সুলতানার কণ্ঠে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা রচিত “যতদূর বাংলা ভাষা” কবিতাটি আবৃত্তির মধ্যদিয়ে আসরের শুভসূচনা করা হয়।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই আসরে আমার গুরু, কবি শহীদ কাদরীও আছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি তাকে। ভালো লাগছে, এ শহরে তিনি এসেছিলেন বলেই বদলে গেছে এর রূপ। “শহীদ কাদরী বাড়ি নেই” না, শহীদ কাদরী বাড়ি আছেন। তার তিরোধানের পর তাকে আবার ধারণ করেছে বাংলার মাটি-মা।
বাংলার জল, বাংলার ফল এত মধুর যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কবি নজরুল, জীবনানন্দ দাশ সবাই বলেছেন, বাংলার জল, ফল, মাটির কথা। সেকারণেই যে যত দূরেই যান না কেন, তিনি বাংলার মাটিতেই থাকেন, বাংলার আকাশেই থাকেন কিংবা বাংলার বিশ্ব-বিস্তারে থাকেন। “শহীদ কাদরী, কবিতার পাদ্রী, এসেছেন শহরে। দৈর্ঘ্যে পাঁচহাত, দশহাত বহরে”। একসাথে আড্ডায় বসে এধরণের ছড়া কাটতাম তাকে নিয়ে।
ইতিহাসপূর্বকাল থেকে বিবর্তীত এই বাঙালির ব্যক্তিসত্তা, বাঙালির জনসত্তা। যেহেতু বাংলাভাষায় স্থান শব্দটি আছে, এবং অন্য যেখানেই এই স্থান শব্দটি পাওয়া যাবে, সেখানেই কোনও না কোনও সময়ে বাংলাভাষার অস্তিত্ব ছিল। মানুষের ব্যক্তিসত্তার অস্তিত্বও তাই। যাদের বুকে বাংলা উচ্চারিত হয়, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে তা লুপ্ত হয়ে যাবে না, কেবল বিবর্তিত হবে, অতঃপর বহুজাতিক ব্যক্তির অস্তিত্বে পাওয়া যাবে। আমরা সবাই, সর্বত্রই সেকাজটিই করে যাচ্ছি। সাহিত্য একাডেমিও তাই।
তিনি বলেন, “যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ” আমার এই কবিতায় উল্লেখিত ইতিহাসের ধারাস্রোতে বাঙালির জাতিসত্তা শনাক্তকরণ থেকে রাষ্ট্র শনাক্তকরণ তথা রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর, স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা ও স্বাধীন পরিবারসত্তা মূলত বাঙালিসত্তা। যে কারণে এই শনাক্তকরণ, সেটি হলো, মানুষ শুধু ব্যক্তি নয়, মানুষ হলো সমষ্টি। দেশ শুধু দেশ নয়, দেশ মানে পৃথিবী। জাতি শুধু জাতি নয়, জাতি মানে মহাজাতিসত্তা। আর একে বুঝতে হলে ভাষাকে বুঝতে হবে। ভাষা হচ্ছে চেতনা, তা সে যে ভাষাই হোক না কেন। ভাষার একটি ‘ওয়া’ সূচক ঐক্য আছে। বাংলাভাষায় সেটি সত্য ও তীব্র, কেননা এর শব্দগুলো পরীক্ষা করলে কিংবা ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা এখানে যুক্ত রয়েছে। আজকে যদি পৃথিবীর ঐক্যের কথা বলি, তবে ভাষিক ঐক্যের পাশাপাশি পৃথিবীর ঐক্য দরকার। এই ঐক্যকে যদি আমরা ধারণ করতে পারি, তবে গাজার সাথে ইজরায়েলের কোনও দূরত্ব থাকবে না। ইউক্রেনের সাথে থাকবে না রাশিয়ার কোনও দূরত্ব। মানুষ যদি সদাচারী হয়, অস্ত্র নয়, শুধুমাত্র ভাষা দিয়ে যুদ্ধ করে, যুক্তির যুদ্ধ; তবে পৃথিবীব্যাপী শান্তি বিরাজ করবে।
কবির অন্তর থেকে উঠে আসা সৃষ্টিশীলতার যে প্রবাহ কবি দেখেছিলেন বাংলাদেশে, সেটি শুধু শহীদ কাদরীই নন, কোনও না কোনও কবিই প্রথম শুরু করেছিলেন। আর এখানেও চর্চার মধ্যদিয়ে সেটি করে যাচ্ছেন মোশাররফ হোসেনসহ আপনারা সবাই; এমনকি সাহিত্য একাডেমির মতো করে অনেকেই।
তিনি বলেন, আজকে যে কবিতাগুলো পড়া হয়েছে, তার অধিকাংশই আমার শুনতে ভালো লেগেছে। কিন্তু এই কবিতায় ব্যাকরণিক যে প্রক্রিয়া আছে তার অভাব রয়েছে। তবে বোধ থেকে উৎসারিত কবিতা অক্ষরবৃত্ত মাত্রাবৃত্ত কিংবা স্বরবৃত্ত ছন্দে না পড়লেও তা কবিতা হতে পারে। তাকে বলি বোধের ছন্দ। তবে প্রকৃত কবি হতে হলে, কবিতাকে কবিতা করে তুলতে চাইলে, ব্যাকরণ শিখতেই হবে। তিনি তার লেখা কবিতার অংশ বিশেষ পড়ার মধ্যদিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
সংগীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস বলেন, “যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ” কবির এই কথাটি যদি সত্যি হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে বোধহয় আমিও একজন ভালো বাঙালি। আমার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এরপর বাংলাদেশে ছিলাম। পরবর্তীতে এখানে এসে আমেরিকার নাগরিকতা নিয়েছি। তিনটি দেশ ঘুরেও আমি বাঙালিই আছি! সাহিত্য একাডেমির সূচনালগ্ন থেকেই এর সাথে ছিলাম। ভালো লাগতো বলে অধিবেশনগুলোতে নিয়মিত আসতাম। বসে বসে স্বরচিত পাঠ শুনতাম। ভাবতাম প্রত্যেকেই আমার প্রিয়জন, এরা লিখছে, এরা এত জ্ঞান রাখে! ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশে থাকার দরুণ আসা হয়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, রামনিধি গুপ্তের টপ্পা গানে আছে “দেখিলে ওমুখ-ও শশী আনন্দে সাগরে ভাসি, তাই তোমারে দেখতে আসি, দেখা দিতে আসিনে”। আজ আমিও আপনাদের দেখতে এসেছি, দেখা দিতে আসিনি।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, অত্যন্ত আনন্দবোধ করছি, কারণ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমাদের মাঝে আছেন। “যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ” চমৎকার এই কবিতার মতোই আমরা বিশ্বব্যাপী একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এটি অবশ্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ। ১০০বছর আগে ‘ফ্লু’ হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এরও আগে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ হয়েছিল ইউরোপে। এবারে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা কোভিড নাইনটিন। এই করোনা অতিমারির সময় নিউইয়র্কসহ পৃথিবীজুড়েই করোনার ওপর অনেক ভালো ভালো গল্প কবিতা উপন্যাস লেখা হয়েছে। সাহিত্য একাডেমির উদ্যোগে সেসব লেখা থেকে বাছাইকৃত একটি সংকলন প্রকাশ করা হলে খুবই ভালো কাজ হবে বলে আমি মনেকরি।
একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও সাংবাদিক নাজমুন নেসা পিয়ারী বলেন, কবিতার প্রতি আমার দুর্বলতা ছোটোবেলা থেকেই। বাংলাদেশে গেলে বিভিন্ন কবিতার আসরগুলোতে যেয়ে থাকি। কিন্তু সাহিত্য একাডেমির মতো এত মানুষের উপস্থিতি কখনও দেখিনি। আজ এখানে এসে সবার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ!
লেখক ও গবেষক আমিনুল ইসলাম (কাশবন প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী) বলেন, এক-কথায় আমি মুগ্ধ! সাত সাগরের পাড়ে এই দূরদেশে এত সাধনা, এত নিষ্ঠা, এখানে এত সবাই লিখছে, এটা আমার ভাবনারও অতীত ছিল। বসে বসে খুঁজছিলাম, কোথা থেকে এত প্রেরণা, কোথায় এর উৎস? উত্তর পেয়েও গেলাম—
“যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ” যদি তাই হয়- তবে বাংলাদেশটা কী? বাংলাদেশের মায়েরা এখনও সন্তানদের ঘুম পাড়ান ছড়া কেটে কেটে। এটা সম্ভবত সেখান থেকেই ধারণ করা, আর এখানে উদগীরণ হচ্ছে। সাহিত্য একাডেমির সাথে নিবেদিত সবার প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সাহিত্যচর্চায় বিপদ অনেক। আমরা অনেকেই জানি, পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হয়েছিল। তখন টেলিভিশন ছিল না, রেডিও এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় রবীন্দ্রসংগীত বন্ধ করা হলো। তৎকালীন একজন গভর্নর তখনকার একজন বড়ো কবিকে ডেকে বললেন, আপনারা কি রবীন্দ্রসংগীত লিখতে পারেন না? এরপর আরও একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের পাঠ্যসূচি রচনা করতে গিয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লালসহ বিপদে পড়েছিলেন, মনির চৌধুরী, আবদুল হাই এরা।
বাংলাসাহিত্য পড়লে তো বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন এগুলো পড়তেই হয়। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন এবং বৈষ্ণব পদাবলী যখন পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করে অনুমোদনের জন্য পশ্চিমে পাঠানো হলো, তখন তারা সেটি খারিজ করে দিলো। বললো এসব কীর্তন টির্তন হবে না। মহাবিপদ! এগুলো ছাড়া তো সাহিত্য হয় না। অনেক ভেবে বৈষ্ণব পদাবলীকে মধ্যযুগের গীতিকবিতা হিসেবে প্রস্তাবটি পাঠানো হলো এবং পশ্চিমারা অনুমোদন দিলো।
- ব্রঙ্কস বরোর বিএনপির নতুন দুটি কমিটি ঘোষনা
- আইরিন পারভীন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপিত হতে চান
- আহবাব চৌধুরী ৮ই জুলাই ইংল্যান্ড যাচ্ছেন
- সম্মিলিত বরিশাল বিভাগবাসীর বার্ষিক ইফতার অনুষ্ঠিত
- ব্রঙ্কসে মাকসুদা আহমেদের পিঠা উৎসব মানুষের ঢল
- সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম অব বাংলাদেশীর বনভোজন অনুষ্ঠিত
- বসবে কবি সাহিত্যিকদের মিলন মেলা
নিউইয়র্কে ৪ দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন আজ - ব্রঙ্কসে দুই গুণীজনকে বাকার সংম্বর্ধনা
- ব্রঙ্কস বরো আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত
- নড়াইল জেলা নিউইয়র্ক ইউএসএ’র ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত