শাটডাউনের প্রভাব নিট পোশাক শিল্পে, স্বল্প সুদে দ্রুত ঋণ চান ব্যবস
প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, শাটডাউন, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে পোশাক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ খাত নিট পণ্য উৎপাদন ও শিপমেন্টে। বিশেষ করে প্রায় এক সপ্তাহ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকা এবং সংযোগ ফিরে এলেও ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে নিটপণ্যের সার্বিক উৎপাদন ও পণ্য জাহাজীকরণের ওপর।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কারফিউ ও শাটডাউনের কারণে কয়েকদিন বন্দর বন্ধ থাকায় তৈরি হয়েছে কনটেইনার জট। এতে পণ্য রফতানিতে বিলম্ব পুষিয়ে নিতে এয়ার শিপমেন্টে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক রফতানিকারক। এয়ারশিপমেন্টের খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতার কারণে তৈরি হওয়া ইমেজ সঙ্কটের প্রভাবে নতুন অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শাটডাউনের সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ক্রেতাদের থেকে বকেয়া অর্থ আদায়ে জটিলতার মুখে পড়েন অনেক কারখানা মালিক। এর প্রভাবে জুলাই মাসের বেতন দিতে সমস্যার মুখে পড়তে পারে অনেক কারখানা। এ পরিস্থিতিতে এক বছরের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে নিট পোশাক কারখানা মালিকরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জরুরি ভিত্তিতে আবেদন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
লিবার্টি নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দেশের নিটপণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক মো. শামসুজ্জামান সময় সংবাদকে বলেন, শাটডাউনের কারণে সময়মতো শিপমেন্টে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিলম্ব পুষিয়ে নিতে এয়ার শিপমেন্ট ও এয়ার-সি শিপমেন্টে যেতে হচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে খরচও। এতে তাদের লাভ থাকছে না বরং লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
পাশাপাশি শাটডাউনের পর ইন্টারনেট ফিরে আসলেও ধীরগতির কারণে বিদেশে থাকা ক্রেতাদের সঙ্গে শুধু ইমেইলে যোগাযোগ বজায় থাকার কথা জানান তিনি।
এম বি নিট ফ্যাশনস লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সময় সংবাদকে বলেন, অর্ডার শিটগুলো আমাদের কাছে পাঠানোর সময় এগুলো থমকে গেছে। সহিংসতার আগে এক মিলিয়ন ডলারের একটি অর্ডার নিয়ে আমার কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিলো। শুধু অর্ডার শিট পাঠানোর আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে অপেক্ষা করতে। পাশাপাশি মাল শিপমেন্ট করা নিয়েও অনেকে বিপদে রয়েছেন। কোন কোন কোম্পানিকে বলা হচ্ছে মাল এয়ারশিপমেন্ট করতে। অনেকে সি-এয়ার শিপমেন্টে মাল বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এতে খরচ এত বেড়ে যাবে যে লাভ তো দূরের কথা বিনিয়োগ তোলাই মুশকিল হয়ে যাবে।
এয়ার শিপমেন্টে মাল পাঠাতে খরচ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এক লাখ ডলারের মাল পাঠাতে এয়ারশিপমেন্টে খরচ হবে ৩০ হাজার ডলার। অর্থাৎ খরচ বেড়ে যাবে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ এক একটি অর্ডারে আমরা লাভ করি খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে।
এদিকে সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি খাতে আয় কমেছে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে নিট খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থ বছরে নিট পোশাকের রফতানি আয় ৫.৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৬০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরে ছিল ১৮.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
এ পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে সৃষ্টি হওয়া জটিলতা এবং ইমেজ সঙ্কটের কারণে আগামী অর্থবছরে নিট খাতে রফতানি আয় প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি কারখানা মালিকরা। ইন্টারনেট চালু হলেও গতি খুব কম হওয়ায় এখনও বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে রফতানিকারকদের। ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হলেও অনেক ফাইল ডাউনলোড করা যাচ্ছে না। জুম মিটিং করা যাচ্ছে না। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল কলও করতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা বিদেশে বাংলাদেশের পোশাক আমদানিকারকদের কোন নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমাদের মূল আশঙ্কার জায়গাটা সেটাই। তারা জানতে চাচ্ছেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি। আগামী বছরের নতুন অর্ডারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে এই ইন্টারনেটের বিচ্ছিন্নতা।
এদিকে নিটখাতে সর্বশেষ অর্থবছরে রফতানি আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতা এবং তার সঙ্গে সাম্প্রতিক এই সহিংসতা এবং ইন্টারনেট শাটডাউনের প্রভাব সার্বিকভাবে দেশের পোশাক শিল্পের কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ নিটখাত অধিক শ্রমঘন, তাই তৈরি পোশাক শিল্পের মধ্যে এই খাতে কর্মসংস্থানের হারও বেশি।
মোহাম্মদ হাতেম জানান, দেশের পোশাক শিল্পের ৫০ লাখেরও বেশি শ্রমিকদের অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক নিটখাতে জড়িত। তাই নিট খাতে অর্ডার কমে যাওয়ার প্রভাব সার্বিকভাবে দেশের কর্মসংস্থানের ওপর পড়তে পারে।
এদিকে সময়মতো রফতানি পণ্য শিপমেন্ট করতে না পেরে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিল্প কারখানার মালিকই নগদ অর্থের সঙ্কটে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক কারখানাতেই জুলাই মাসের বেতন দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ছোট কারখানাগুলোই এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বলে জানান বিকেএমইএ’র পরিচালক মো. শামসুজ্জামান।
এ পরিস্থিতিতে বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে কারখানা মালিকদের দুই শতাংশ সুদে এক বছর মেয়াদী ঋণ দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
- `রক্তদানে বিত্ত বৈভব নয় প্রয়োজন সেবার মানসিকতা`
- প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে টোটাল ফিটনেস ডে
- তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শ্রমিক পাঠাতে চায় বাংলাদেশ
- ১২ পয়েন্ট কাটা পড়লেই বাতিল ড্রাইভিং লাইসেন্স
- মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক
- সফলতার গল্প পড়ে পাঠকেরা অনুপ্রাণিত হন
- সৈয়দ নজরুল ও আশরাফের ম্যুরালে কালি লেপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
- যেসব কারণে দেশের বড় অংশজুড়ে মরুভূমির মতো আবহাওয়া
- সরকারের এক্সিলারেটিং প্রোটেকশন ফর চিলড্রেন (এপিসি) প্রকল্প ও জাতি
- পূর্বাঞ্চলে দুই রুটে প্রথম বিশেষ ট্রেন