নতুন রেকর্ড বিচার বিভাগের ইতিহাসে
প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এই প্রথম হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে সরাসরি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী এই নিয়োগ দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে আইনাঙ্গনসহ সারা দেশে। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতিসহ একযোগে আপিল বিভাগ থেকে ছয় বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনাও আগে কখনো ঘটেনি।
আইনজীবীরা বলছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিচার বিভাগে আর এমন ঘটনা দেখা যায়নি। এর পেছনে বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচার বিভাগকে চরম দলীয়করণ করাকে দায়ী করছেন তারা। তারা বলছেন, মেধা ও যোগ্যতার বিবেচনায় নিয়োগ না দিয়ে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে বিচার কাজে তার প্রভাব পড়েছে। ধীরে ধীরে তাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে দেশের জনগণ। অনাস্থার কারণে ক্ষোভের মুখে একযোগে প্রধান বিচারপতিসহ সর্বোচ্চ আদালতের ছয়জন বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আইনজীবীরা বিচার বিভাগকে সব সময় দলীয়করণের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিচার বিভাগকে নিজ দলের অঙ্গসংগঠনের মতো বানিয়ে ফেলেছিল। বিচার কাজে তার প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের জনগণ বিচার বিভাগের দলীয়করণ চায় না। এ কারণে ছাত্র আন্দোলনের মুখে সবাইকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এমন পদত্যাগ বিচার বিভাগের ইতিহাসে ঘটেনি।
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, হাইকোর্ট থেকে প্রধান বিচারপতি সরাসরি নিয়োগে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে আমার জানা মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর এমনটি ঘটেনি।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন পদত্যাগ করেছেন। আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, এসব বিচারপতি আগের সরকারকে সহযোগিতা করেছেন। রাজনৈতিক কোনো ইস্যু এলে তারা সরকারের পক্ষে থেকেছেন। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত (পলিটিক্যাল মোটিভেটেড) হয়ে কাজ করেছেন। স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারেননি। এ কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের পদত্যাগ দাবি তোলেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কারণেই বিচার বিভাগের আজকের এই দুর্দশা। গত ১৪ বছরে যেসব বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে, তার বেশিরভাগই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হয়েছে। ‘মেধার লোক’ না বসিয়ে ‘স্লোগানের লোক’কে বিচারপতি বানানো হয়েছে। আইনে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনের (সুপারসিট) বাধা নেই। কিন্তু মেধাবী লোকজন থাকলে তাদের ক্ষেত্রে সুপারসিট করা ঠিক হয়নি। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে, সুপারসিট না করা হলে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের অনেক আগেই আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হওয়ায়, সেটা হয়নি। নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিলে তো বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে না। মানুষের মাঝে বিচার বিভাগ নিয়ে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেবে। সেজন্য বিচার বিভাগকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ১৪ বছর ধরে যেভাবে দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারই পরিণতি দেখতে পেয়েছে জাতি। যাকে সরকারের লোক মনে করা হয়েছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা সরকারের পাশে থাকবে, শুধু তাদেরই নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক কারণে অনেক ভালো ভালো বিচারপতি, যেমন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি মো. ইমান আলীসহ অনেক দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি বানানো হয়নি। তারা প্রত্যেকেই সৎ, মেধাবী ও দক্ষ ছিলেন। সৎ, মেধাবী ও দক্ষতা অনুযায়ী নিয়োগ হলে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনেক আগেই প্রধান বিচারপতি হতেন। কিন্তু তা হয়নি। তিনি আরও বলেন, শুধু দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বিচার কাজেও। জামিন ও রায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও। দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব বিচারপতি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। ফলে বিক্ষোভের মুখে তাদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। এটা বিচার বিভাগের ইতিহাসে অনন্য, নজিরবিহীন।
এর আগে গত শনিবার ছাত্র বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধান বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসান। এরপর বিকেলে আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। পরে ওইদিন রাতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সে অনুযায়ী গতকাল শপথ নেন প্রধান বিচারপতি।
এদিকে দেশ স্বাধীনের পর থেকে ২৪ জন প্রধান বিচারপতি অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের সবাই আপিল বিভাগের বিচারপতির দায়িত্ব পালনকালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এবারই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটল। এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন। (২) কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হইলে, এবং (ক) সুপ্রিম কোর্টে অন্যূন দশ বৎসরকাল অ্যাডভোকেট না থাকিয়া থাকিলে; অথবা খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বৎসর কোন বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করিয়া থাকিলে; অথবা (গ) সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকিয়া থাকিলে; তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না।’ সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে এর বাইরে আর কিছুই বলা নেই।
- `রক্তদানে বিত্ত বৈভব নয় প্রয়োজন সেবার মানসিকতা`
- প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে টোটাল ফিটনেস ডে
- তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শ্রমিক পাঠাতে চায় বাংলাদেশ
- ১২ পয়েন্ট কাটা পড়লেই বাতিল ড্রাইভিং লাইসেন্স
- মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক
- সফলতার গল্প পড়ে পাঠকেরা অনুপ্রাণিত হন
- সৈয়দ নজরুল ও আশরাফের ম্যুরালে কালি লেপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
- যেসব কারণে দেশের বড় অংশজুড়ে মরুভূমির মতো আবহাওয়া
- সরকারের এক্সিলারেটিং প্রোটেকশন ফর চিলড্রেন (এপিসি) প্রকল্প ও জাতি
- পূর্বাঞ্চলে দুই রুটে প্রথম বিশেষ ট্রেন