ঢাকা, ২০২৪-১১-২৯ | ১৫ অগ্রাহায়ণ,  ১৪৩১

জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চায় সরকার

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২০ আগস্ট ২০২৪  

জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সাক্ষাতে এ সহায়তা চাওয়া হয়। সাক্ষাৎ শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় অংশীদার। তারা এত দিন মূলত প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে। এবার তাদের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। জাপান এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের ওপর বিদ্যমান চাপ কমাতে চায় সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ডলার প্রাপ্তির প্রধান উৎস রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ। বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। এ অবস্থায় প্রকল্প ঋণের বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেতেও আগ্রহী সরকার। কারণ বাজেট সহায়তার অর্থ সরকার প্রয়োজন অনুসারে যে কোনো কাজে ব্যয় করতে পারে।  

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে অন্তত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা প্রত্যাশা করছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী এ বিষয়ে প্রাথমিক আশ্বাসও দিয়েছে।
এদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর জাপান বাংলাদেশকে ২০৩ কোটি ৯১ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। একই অর্থবছর দেশটি বাংলাদেশের অনুকূলে ১৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশকে জাপানের দেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণের ১৭ শতাংশ। জাপানের ঋণ সাধারণত সহজ শর্ত ও কম সুদহারের হয়ে থাকে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চালু হওয়া সব প্রকল্প চালু রাখার নিশ্চয়তা চেয়েছে জাপান। ঢাকার দেশটির রাষ্ট্রদূতকে এ ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের বলা হয়েছে প্রতিটি প্রকল্পই চলবে। জাপানের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক, তাদের ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই।
ঢাকায় মেট্রোরেল, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দরসহ আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে জাপান। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিনিয়োগ ৩৮ কোটি ডলারেরও বেশি।

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে আরও প্রকল্পের জন্য তারা আমাদের বিবেচনা করছে। আরও মেট্রোরেলের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। জাপানের প্রতিনিধি বলেছেন, বর্তমান
সরকারের বিষয়ে তারা খুবই ইতিবাচক। দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোর অর্থ দ্রুত ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব ছাত্র জাপানে যায়, তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, এ বিষয়টিতে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। তবুও এই বার্তা তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবেন।
আর্থিক খাতে সংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নেবে– সেটাও জানতে চেয়েছে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে সাক্ষাতে আসা জাপানি প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক খাত, এনবিআর ও কাস্টমসে সংস্কার বিষয়ে তারা প্রশ্ন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি চায় তারা। এগুলো দ্রুত সংস্কারের দরকার আছে।
আলোচনায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে জাপানের সহযোগিতা চান সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় জাপানিরা বেশ দক্ষ। এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এসবের বাইরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তাদের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, জাপানি উদ্যোক্তাদের আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আড়াই হাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কারণ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এটাও তারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো দেখেও জাপান বেশ খুশি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের অনেককেই তারা চেনেন। বিশেষ করে ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে। আমিও বেশ কয়েকবার জাপান গিয়েছিলাম।’ অর্থ উপদেষ্টা ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়