ঢাকা, ২০২৫-০২-২৩ | ১০ ফাল্গুন,  ১৪৩১

রপ্তানিবান্ধব বৈদেশিক বিনিয়োগ ছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণ হবে না

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫  

বাণিজ্য সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম খান বলেছেন, রাজস্ব আদায় এবং রপ্তানিবান্ধব সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া রপ্তানি বহুমুখীকরণ হবে না। পাশাপাশি রপ্তানি সহজীকরণ এবং লজিস্টিকস পলিসি করা গেলে বাণিজ্য খরচ কমবে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।  

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটঃ ব্যাক্তিখাতের অবস্থা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

দ্বি-বার্ষিক সেমিনারটি সঞ্চালনা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) প্রধান নির্বাহী ড. এম মাশরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস।

মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু আমাদের রাজস্ব আদায় মাত্র ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি বাড়াতে হবে। কিন্তু কীভাবে হবে? কর অটোমেশন হচ্ছে না, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য খরচ কমাতে হবে, যাতে বিশ্ববাজারে আরও শক্ত প্রতিযোগী হওয়া যায়।

এই অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, যখন রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৬৫ শতাংশ ছিল তখন থেকে রপ্তানি বহুমুখীকরণের কথা বলা হচ্ছে। আজ রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের অবদান ৮৫ শতাংশ। কিন্তু বহুমুখীকরণ আজও হয়নি। উলটো লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের রপ্তানি কমে গেছে। এখনই আমরা পারব, নয়তো কখনোই পারব না।

মূল প্রবন্ধে তাসকিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে আমাদের নিট বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ ৬ বছরে সর্বনিম্ন, যা প্রায় ২৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। আমাদের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে ব্যস্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসলেও সামগ্রিকভাবে এখনো অনেকটা সমস্যা রয়ে গিয়েছে। ব্যক্তি খাতের কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই ঋণের প্রবাহ ডাবল ডিজিটে আনতে হবে।

এসময় ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ২০২২ থেকে যে ব্যস্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ চলছে তার থেকে এখনো আমরা উঠে আসতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব কিছু ভাল কাজ করছে, যার ফলে আমাদের রিজার্ভের পতন ঠেকানো গেছে। এই বছরের মধ্যে রিজার্ভে আরও ৫-৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়াতে না পারলে আমাদের উৎপাদন কমে যাবে। যদি জ্বালানি সমস্যা সমাধান এবং শিল্প কারখানায় অস্থিতিশীলতা বন্ধ করা যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। এছাড়া দাতা সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনায়নে শ্বেতপত্র, টাস্কফোর্স এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশনে স্মুথ ট্রানজিশন এই তিন প্রতিবেদন বিবেচনায় নিতে হবে। এগুলো বাস্তবায়ন না করলে আমরা যেখানে যেতে চাচ্ছি সেখানে যেতে পারব না।

আমরা অপ্রত্যক্ষ করের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে করের আওতায় আনতে পারছি না। ইন্টারঅপারেবিলিটি বাড়াতে হবে। এছাড়া, সামাজিক সুরক্ষায় খরচ বাড়াতে হবে এবং কী কী খাতে তা খরচ করা হচ্ছে তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আমাদের মনিটারি পলিসি এবং ফিজক্যাল পলিসির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। নাহলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।

ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে থাকবে। আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়