চরকিতে উড়ছে আন্দোলন, টালিগঞ্জে এখনো অচলাবস্থা

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৬:৫৯ এএম, ৩১ জুলাই ২০২৪ বুধবার

বাংলা অভিধান ঘেঁটে চরকির বেশ কিছু অর্থ পাওয়া যায়। যার একটি হলো- সুতা জড়াবার নাটাই। সেই নাটাইয়ের অস্থির সূতোয় বাঁধা পড়ে উড়ছে কলকাতার শোবিজের দ্বন্দ্ব ও আন্দোলন। তৈরি হয়েছে একটা অচলাবস্থ। যার সূত্রপাত বাংলাদেশের একটি ওটিটি প্লাটফর্মে কলকাতার পরিচালক রাহুল মুখার্জির কাজ করা দিয়ে। সম্প্রতি ঢাকায় এসে সেই কাজটি করেছিলেন তিনি। যেখানে জুটি হয়ে আসবেন আরিফিন শুভ ও সোহিনী সরকার।

রাহুল নাকি গোপনে বাংলাদেশে এসে কাজ করে গেছেন। সেই অভিযোগ এনে তাকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওপার বাংলার চলচ্চিত্র ও টিভির পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই) এবং ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। পরে পরিচালকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই এক বিবৃতির মাধ্যমে ডিএইআই রাহুলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

কিন্তু ফেডারেশন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। কোনো টেকনিশিয়ান রাহুলের সঙ্গে কাজ না করার ঘোষণা দেন। সেই দ্বন্দ্ব চলমান এখনো। একদিকে টেকনিশিয়ানরা রাহুলকে চাইছেন না। অন্যদিকে পরিচালকরা রাহুলের পক্ষ নিয়ে সব রকম শুটিং বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি সিনেমার পর আজ মঙ্গলবার ধারাবাহিক নাটকের শুটিংও বন্ধ করে দিলেন পরিচালকরা। যার ফলে জটিলতা বাড়ছেই। তাই অনেকে ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আনন্দবাজার জানাচ্ছে, গতকাল সোমবার দুপুরে বুম্বাদা’খ্যাত অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠক বসেছিলেন পরিচালকেরা। সেখানে গৌতম ঘোষ থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের নামি নির্মাতাদের প্রায় সবাই ছিলেন। স্বশরীরে হাজির না হলেও লাইভে অংশ নেন অভিনেতা দেবও।

সেদিনই বিকেলে আবার টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানস্ স্টুডিওতে পরিচালক গিল্ড কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ফেডারেশন। তারপরই সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশন পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘গুপি শুটিং মানছি না’ বা ‘রাহুল মুখোপাধ্যায়কে পরিচালক হিসেবে মানি না’। স্টুডিও চত্বরে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন টেকনিশিয়ানরা। উঠল ‘মানছি না, মানব না’ স্লোগান। বলে রাখা ভালো, আসছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাহুল ‘গুপি’ নামের একটি সিনেমা বানাতে যাচ্ছিলেন। সেই সিনেমার শুটিং নিয়েই বিপদে পড়েছেন তিনি।

ফেডারেশন যুগ্ম সম্পাদক সুজিত কুমার হাজরা বলেন, ‘গতকাল থেকে আজ ভোর পর্যন্ত যে সমস্ত সেকেন্ড ইউনিট শুটিং করেছে, আমরা তো অনুমতি দিয়েছি। আর বলা হচ্ছে আমরা নাকি শুটিং বন্ধ করেছি!’

ফেডারেশন মনে করছে, ইচ্ছে করে সোমবার ইন্ডাস্ট্রি স্তব্ধ করে দিয়েছেন পরিচালকেরা। পুরোটাই ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে দাবি উঠেছে। ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র! তবে আমরা আলাপ আলোচনায় বসতে রাজি।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিনেমা পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু আজ সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ করে যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হল, সেটা প্রযোজকেরা জানান।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার সন্ধ্যায় ফেডারেশনের ইসি কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। এ দিকে রাত ৮টায় পরিচালকেরা ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। যদিও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য এসে পৌঁছায়নি। দু’পক্ষের মধ্যস্থতায় শুটিং নিয়ে জটিলতা কাটে কিনা, তা জানার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

তবে এই ঘটনা নিয়ে প্রসেনজিতের বাড়িতে বৈঠকের পর পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘একটা অচলাবস্থা চলছে। আমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে চাই। আমরা যেন সবাই মিলেমিশে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক জায়গায় নিয়ে যাই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই চেয়েছেন। এই অচলাবস্থা থেকে বেরোতে গেলে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। টেকনিশিয়ানদের জন্য উদ্বিগ্ন। দু’পক্ষকেই ভাবতে হবে। কেন এই অচলাবস্থা? তা মেটাতে চাই। কোনও কলহ নয়, বরং পারস্পরিক সৌহার্দ। আমরা বিভাজনে বিশ্বাস করি না। আমাদের ছোট একটা ইন্ডাস্ট্রি। এখানে কোনও পক্ষ নেই। সবাই আমরা এক।’

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা একটি পরিবারের মতো। আমরা সারা জীবন টেকনিশিয়ানদের জন্য লড়াই করেছি। এটা মান-সম্মানের লড়াই। একটা পরিবারে অভাব-অভিযোগ থাকবে। তাই বলে পরিবার ভেঙে যায় না। আমরা চাই কাজটা চলুক।’

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হাতজোড় করে অনুরোধ করে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে এই অচলাবস্থা যাতে কেটে যায় এবং শুটিং শুরু হয়, সেটাই চাই। পরিচালকেরাও টেকিনিশিয়ান। আমরাও যেন কাজ করতে পারি।’

কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই দ্বন্দ্ব অবসানের কোনো খবর মেলেনি।