বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৩:০৭ এএম, ৮ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:০৭ এএম, ৮ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং উদ্বেগজনক। বিচারহীনতা, সরকারের গঠন নিয়ে চলমান অস্থিরতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই প্রতিবেদনে ছাত্র সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিরোধী দল বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি, প্রশাসনের ভূমিকা এবং ভারত পন্থিদের প্রভাব বিশ্লেষণসহ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্টদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কিছু কথা আলোচিত হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে, যার মধ্যে প্রধানত স্বৈরাচারী শাসন এবং বিচারহীনতা উল্লেখযোগ্য। ছাত্র সমাজ এই পরিস্থিতিতে একটি সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ছাত্ররা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে প্রধানত স্বচ্ছ নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, এবং বিচারহীনতার অবসান রয়েছে। ছাত্র সমাজের মতামত এবং অংশগ্রহণকে গুরুত্ব না দিলে বড় আকারের দ্বিমত এবং অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সরকারের নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলমান রয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বিশেষ শক্তির সহায়তায় দেশ ছেড়ে ভারত এবং পরে অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে পারেন। তবে, এ ধরনের খবর পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করতে পারে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

বিরোধী দল বিএনপি বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করছে। তারা সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, এবং বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। বিএনপির প্রধান দাবি হলো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। তারা আশা করছে যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থায়ী সরকার গঠনের আলোচনা চলছে, তবে এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি স্বল্প মেয়াদি সরকার গঠনে রাষ্ট্রপতিসহ তিন বাহিনীর প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদাহরণ বাংলাদেশে আগেও রয়েছে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছিল। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছিল। এবারও তেমনি একটি সরকার গঠন হতে যাচ্ছে যা অতীতের চেয়ে ভালো এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ কায়েম করে জাতীয় নির্বাচন করতে পারবে কিনা সেটাও উদ্বেগের বিষয়!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের সাথে সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন প্রদানকারী ভারত পন্থিরা বর্তমান পরিস্থিতিতেও সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে সহায়তা প্রদান করছে, যা সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নৈতিকতার সঙ্গে দেশ গড়ার কাজে সংযুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। প্রশাসনের উচিত হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করা এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা। নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের নৈতিক এবং সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।

দেশকে একটি স্থিতিশীল পরিবেশে আনার জন্য এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি।

১) নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন: একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
২) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৩) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখা এবং বিচারহীনতার অবসান ঘটানো।
৪) ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণ: শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা।
৫) প্রশাসনিক সংস্কার: প্রশাসনের মধ্যে নৈতিকতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও, একটি কার্যকর এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা নিরসন এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে পারলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ছাত্র সমাজ, বিরোধী দল এবং প্রশাসনের সক্রিয় এবং নৈতিক ভূমিকা দেশের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

দেশ, জাতি এবং নিজের স্বার্থে একটি নতুন সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবার দায়িত্ব এবং কর্তব্য খুবই জরুরি। এমন একটি সময় আমি আশা করব সব শিক্ষার্থী ফিরে যাবে শিক্ষালয়ে এবং মনোযোগী হবে তাদের সুশিক্ষায়। একই সাথে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য একটি দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনীত করার এবং সে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, এখন দুর্নীতিমুক্ত সৃজনশীল দেশ গড়ার পালা।