অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি কেমন হতে পারে

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৩:৪৭ এএম, ৯ আগস্ট ২০২৪ শুক্রবার

বাংলাদেশে ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। পরে এটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়। গণবিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে হেলিকপ্টারে করে দিল্লিতে পালিয়ে যান। এক মাসেরও বেশি সময় চলা আন্দোলনে দেশের হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। 

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের রুপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশকে নতুনবাবে গড়তে। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি কী আবার আগের অবস্থায় ফিরবে- এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরপর কী হবে তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

এই সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে কয়েক শ’ ছাত্র প্রাণ হারান, আহত হন কয়েক হাজার। গণবিক্ষোভের মুখে এরপর হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। 

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহ আল-জাজিরাকে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন মোড় নেবে, তা কেউ প্রত্যাশা করেনি।

তিনি বলেন, এর আগেও বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু এবারের গণঅভ্যুত্থান একেবারেই নতুন। এই জনবিক্ষোভে স্বতস্ফূর্ত অংশ নিয়েছেন সবাই।

ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের বাধা তৈরি হয়। 

সরকার পতনের এক সপ্তাহ আগে এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ছাত্র আন্দোলন, কারফিউ এবং দেশজুড়ে ইন্টারনেট না থাকায় দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চার দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার কিছু পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। কারখানা বন্ধ থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এমন বাণিজ্যিক ক্ষতিতে উদ্বেগে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারকারীরা বলেছেন, তারা বছরের বাকি সময়ের জন্য তাদের উত্পাদন তাদের দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন।

‘যারা বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় চীন প্লাস ওয়ান কৌশল হিসেবে দেখছিল। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতায় তারা প্রশ্ন তোলেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে না পারলে পণ্য সরবরাহে প্রভাব পড়বে বলে জানান ভিনা নাজিবুল্লাহ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন।

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও অর্থনীতিতে যেসব চাপ থাকায় বিক্ষোভ তৈরি হয়। এসব বিষয় পরিকল্পনায় এনে সরকারের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৭ কোটির জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছর। এক চতুর্থাংশ বেশির নাগরিকের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এটি এ দেশের অর্থনীতির জন্য আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু দেশে এখনও উল্লেখযোগ্যহারে বৈষম্য ও দারিদ্র্য রয়েছে। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী রয়েছেন ৪০ শতাংশ, যারা বেকার বা কোনো ধরনের দক্ষতা প্রশিক্ষণ নেই।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা রয়েছেন তাদেরকে আগে অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় গুরুত্ব দিতে হবে। আর এটি করতে হলে সবার আগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে খুবই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর ফলে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে নিরাপদ বিনিয়োগের পরিবেশ না হলে দেশি বিনিয়োগকারীরাও চলে যেতে পারেন। 

দেখা এবং অপেক্ষা করা

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশের বিনিয়োগ আছে। শুধু পোশাক উৎপাদন বাংলাদেশ অনিক গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি আমদানিকারক হিসেবেও একটি বড় বাজার রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও চীন ও জাপানসহ দেশগুলোর অবকাঠামোতে বড় বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। 

সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, ২০২৩ সালে ৭৩০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, তুলা, ফ্যাব্রিক ও সার।

কুগেল ম্যান বলেন, আমি আশা করি, অন্তর্বতী সরকারে এমন লোক রয়েছেন, যারা দেশে শান্তি এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার মাধ্যমে দেশে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, দেশ অস্থিতিশীল থাকলে বাণিজ্যিক অংশীদার ও বিনিয়োগকারীরা আরও অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। ফলে দেশে বিনিয়োগ কমবে। কারণ, বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীল পরিবেশ চান। কিন্তু দিনশেষে ব্যবসায়ীরা ঘাবড়ে যাওয়া ও অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না, তিনি যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণেই নয়, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারত। দেশটি পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশেকে সহায়তা করে। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সম্পর্ক ছিল অনেক গভীর।

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এখানে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূণ হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব বাধা কেটে যেতে পারে, যোগ করেন মাইকেল কুগ