পাপন সরে গেলে কে হবেন সভাপতি, কী চলছে বিসিবির ভেতরে?

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৪:৫৪ এএম, ১৮ আগস্ট ২০২৪ রোববার

তিনি নিজ মুখে বলেননি, ‘আমি আর বিসিবি প্রধান হিসেবে থাকতে রাজি না কিংবা বোর্ড সভাপতি হিসেবে আর থাকার ইচ্ছে নেই। সরে দাঁড়াতে চাচ্ছি।’

সরাসরি নাজমুল হাসান পাপনের মুখ থেকে এমন কথা শোনা যায়নি। তবে বোর্ডের পরিচালক পর্ষদের মধ্য থেকেই চাউর হয়েছে যে, নাজমুল হাসান পাপন আর বিসিবি সভাপতি থাকতে চান না। পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন।

সে খবর এমনভাবে প্রচার হয়েছে যে, মোটামুটি সবাই ধরেই নিয়েছেন বিসিবি পরিচালক পর্ষদের সভাপতির পদে আর দেখা যাবে না পাপনকে। তিনি পদত্যাগ করবেন। হয়তো খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, নাজমুল হাসান পাপন বোর্ড প্রধান পদ ছেড়ে দিলে তার চেয়ারে বসবেন কে? বিসিবির নতুন সভাপতি হবেন কে? বিসিবিতেইবা কী হচ্ছে? কী হবে? তা জানতে ক্রিকেট অনুরাগীদের কৌতুহলের শেষ নেই। সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন, বিসিবিতে কী হয় তা দেখতে

অনেকেই হয়তো ভাবছেন বোর্ড প্রধান পদ থেকে পাপন পদত্যাগ করলেই ল্যাঠা চুকে যাবে। বিষয়টা এত সহজ নয়, কিছুটা জটিল। এটার জন্য একটা প্রক্রিয়া আছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনেও আছে গঠনতন্ত্রের বাধা। বোর্ডের সব পরিচালক একযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনও সম্ভব না।

এদিকে বিসিবির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে ক্রিকেট পাড়ায় এ মুহূর্তে কয়েকটি নাম শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিসিবি ও এসিসির সাবেক অন্যতম শীর্ষ কর্তা সৈয়দ আশরাফুল হক হবেন বোর্ডপ্রধান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৈয়দ আশরাফুল হকের কথাই শোনা যাচ্ছে বেশি। আবার কারো কারো মুখে ফারুক আহমেদের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদকে নিয়েও আছে নানা গুঞ্জন। ক্রিকেট অঙ্গনে আশরাফুল হক আর ফারুক আহমেদের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে।

পাশাপাশি আরও একটি খবরও আছে বাজারে। শোনা যাচ্ছে বিসিবির কার্যক্রমে নিয়ম, শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নাকি একজন সেনা কর্মকর্তার কথাও ভাবা হচ্ছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রিকেট পাড়ায় সভাপতি হিসেবে যে দুজনার কথা শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল হক বিসিবির কাউন্সিলর নন। ফারুক আহমেদ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কদের কোটায় বিসিবি কাউন্সিলর। কাজেই ফারুক আহমেদের বোর্ডে আসার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই বেশি।

অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফুল হককে বিসিবির চলমান প্রক্রিয়ায় বোর্ডে এনে পরিচালক করে সভাপতি পদে বসানো কঠিন। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বিসিবির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী?

পাপনের চেয়ারে কে বসবেন? কাকে বসানো হবে? তাও সোজাসাপ্টা বলা কঠিন। এখানে আইসিসির নিয়মকানুন, বিসিবির গঠনতন্ত্রের ওপর নির্ভর করবে সব কিছু। এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, নতুন কাউকে সভাপতি করতে হলেও বিসিবির সর্বশেষ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবি গঠনতন্ত্রে পরিষ্কার আছে, বিসিবি পরিচালকদের মধ্য থেকেই সভাপতি মনোনীত করতে হবে।

অর্থাৎ নতুন সভাপতি নিয়োগ দিতে হলে তাকে আগে পরিচালক পর্ষদের সদস্য হতে হবে। কাজেই বিসিবি প্রধানের পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন সরে দাঁড়ালেও তার চেয়ারে কাউকে হুট করে বসানো কঠিন।

প্রথম ও শেষ কথা হলো ক্লাব কোটা, জেলা-বিভাগীয় কোটা, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কোটা, সার্ভিসেস ও ক্রীড়া পরিষদসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরি মিলে যে ১৭০+ কাউন্সিলর আছেন, তার বাইরে থেকে কাউকে পরিচালক করে আনার কোনো বিধান নেই।

পরিচালক পর্ষদের সংখ্যাটা এখন ২৪। এখন যদি এই ২৪ জনের সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন এবং সেটা স্বেচ্ছায়, তাহলে আইসিসির কোনো বাধা নিষেধ থাকবে না। পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে।

তখন আপনাআপনি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। বোর্ডের ২৪ পরিচালকের (বরিশালের আলমগীর খান আলো সদ্য প্রয়াত) ৯ জন পরিচালক থাকলেই কোরাম করা যাবে।

ভেতরের খবর, বর্তমান বোর্ডের ৯ জন পরিচালক থেকে যেতে আগ্রহী। যাতে আগামী ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে এই বোর্ডই সচল থাকে।

কিন্তু গত ১৬ বছর অবহেলিত, অবমূল্যায়িত ক্রিকেট সংগঠকদের অনেকেই তা রাখার বিপক্ষে। তাদের দাবি, জোরপূর্বক না হলেও এমন একটা পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটানো, যাতে করে বর্তমান বোর্ডের সবাই পদত্যাগ করেন।

তাহলেই কেবল অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় হাত দেওয়া সম্ভব। কিন্তু বর্তমান বোর্ডের অন্তত ৯ জন পরিচালক থেকে গেলেও বোর্ডে হাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

একটি অসমর্থিত সূত্রের খবর, বিসিবি পরিচালক পর্ষদের পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি সমর্থিত সংগঠকদের একাংশ আরও একটি প্রক্রিয়ার কথাও নাকি ভাবছে। সেটা হলো, একান্তই যদি বোর্ডের সব পরিচালক পদত্যাগ না করেন, তাহলে যাতে অন্তত ৮০ ভাগ পরিচালকের পদত্যাগ নিশ্চিত করে এই বোর্ডের ৪-৫ জনকে রেখে নতুন করে ক্লাব ও এনএসসির কোটায় অন্তত ৫ জন পরিচালকের নিয়োগের চেষ্টা করার কথা ভাবা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকার ক্লাব কোটায় নির্বাচিত আহমেদ নজিব, মঞ্জুর কাদের, ওবায়েদ নিজাম ও গোলাম মোর্তজা পাপ্পা এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে সরাসরি নির্বাচিত আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি এবং জালাল ইউনুসের জায়গায় নতুন ৫-৬ জনকে পরিচালক নিয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে বোর্ডের বর্তমান পরিচালক পর্ষদের মাহবুব আনাম, আকরাম খান, ইফতেখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহাকে রেখে তাদের সাথে জাতীয় দলের ২ সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ, খালেদ মাসুদ পাইলট, কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমসহ কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে আরও জন দুয়েককে বোর্ডে আনার চিন্তাও চলছে। তখন ৯ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। তা না হলে বর্তমান কমিটির পূর্ণ মেয়াদে (আগামী বছর অক্টোবর) থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই থাকবে বেশি।