রিজার্ভে বড় অবদান রাখছেন মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৪:২৯ এএম, ৫ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সুফলদায়ক এক গন্তব্য মালয়েশিয়া। দেশটিতে কাজের পরিবেশ যেমন ভালো, তেমনি কর্মীরা আয়ও করতে পারেন ভালো। ২০২২ সালের ৮ই আগষ্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ২২ মাসে বাংলাদেশ থেকে পৌনে ৫ লাখ কর্মী নিয়েছে দেশটি। আর এ সময়ে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন এই কর্মীরা। যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স যোগানদাতা হিসেবে ৮ম থেকে ৪র্থ স্থানে উঠে এসেছে মালয়েশিয়া। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী আয় প্রাপ্তি আরও বাড়ানো সম্ভব, যদি দুই দেশের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এজেন্সি বাড়ানোর মাধ্যমে নির্ঝঞ্জাটভাবে আরও কর্মী রপ্তানি করা যায়।

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের আওতায় ২০২২ সালের ৮ই আগষ্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ২২ মাসে পৌনে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গমন করেছেন। বিশাল এই অভিবাসন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে অনলাইন ভিত্তিক ও স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার পদ্ধতিতে হওয়ায় কোন কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রতারিত হননি। তারা যথাযথ নিয়মে নিয়োগকারী কোম্পানিতে কাজ পেয়েছেন। এসব শ্রমিকরা ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন এবং সেটা রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন। ওই ২২ মাসে যাওয়া শ্রমিকরা ন্যূনতম ১৫শ’ রিঙ্গিত মূল বেতন এবং ওভারটাইমসহ মাসে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন- ভাতা পাচ্ছেন। এই হিসেবে তারা মাসে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন।


তাদের মতে, যদি আরও ৫০০ এজেন্সি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারতো তাহলে কোন বিতর্কই থাকতোনা। অবশ্য ১১শ’ সহযোগি এজেন্সি এই প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল।


পুরানা পল্টনের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক রবিউল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়া যাওয়া শ্রমিকরা সেখানকার কাজের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কর্মীদের সবাই ভালো আছেন। মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগও কর্মীদের চুক্তি মোতাবেক সব ধরনের অধিকার ও কল্যাণ আন্তরিকতার সঙ্গে নিশ্চিত করেছেন। ওই ২২ মাসে বড় সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কাজে যোগদানের পর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫১ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রবিউল ইসলাম আরও জানান, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে ৩৫৮ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। নিয়োগকারী কোম্পানি সকল অভিবাসন ব্যয় বহন করেছে। বর্তমান ধাপে মালয়েশিয়ায় গমনকারী পৌনে পাঁচ লাখ কর্মী ও পরিবার-পরিজন মিলে অন্তত ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।
জানা যায়, মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ১০১টি এজেন্সিসহ সহযোগী এজেন্সি এবং নিয়োগকারীর পাওয়ার অব অ্যাটর্নীর মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রায় ১১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় বর্তমান ধাপের কর্মী প্রেরণে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।
একজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক বলেন, কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সির বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে দুদক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দফায় দফায় তদন্ত অথবা গণমাধ্যমে অপপ্রচারের ফলে নিয়োগকারী দেশে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর ফলে ওই দেশে কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।
সরকারের এ্যালোকেশন অব বিজনেস মোতাবেক জনশক্তি রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিভিন্ন তদন্তে যারা ভালো ব্যবাসায়ী তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত। এছাড়া তদন্ত কার্যক্রম বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বিদ্যমান আইনের আওতায় তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হলে এই সেক্টরে বর্তমানে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা দূর হবে এবং দ্রুতই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিষয় সব সময় আন্তরিক। আমরা ওই দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো