রপ্তানি-রেমিট্যান্সে সুবাতাস, রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা কাটছে
প্রবাস নিউজ
প্রকাশিত : ০৩:২৬ এএম, ৯ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই বাড়ছে প্রবাস আয়। অন্যদিকে শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের পরও গত মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৬.২৭ শতাংশ। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা আগের থেকে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হয়েছে
রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সের ডলার দিয়েই আমদানি দায় পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে। তাই পুনরায় রিজার্ভ গঠনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময় এসেছিল ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি মাসে প্রবাস আয়ের প্রবাহ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স আসার গতি ভালো ছিল। একই ধারা অব্যাহত থাকায় সদ্যঃসমাপ্ত এ মাসে ২৪০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। অক্টোবরের শুরুতেই রেমিট্যান্সের যে প্রবাহ রয়েছে তাতে ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধপথে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। এতে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ বাড়বে বলে আশ্বাস দেন।
অপরদিকে আগস্টের পর সেপ্টেম্বর মাসেও প্রবাস আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায়, যা ১০৭ কোটি ডলার বা ৮০.২২ শতাংশ বেশি। গত দুই মাসে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পণ্য রপ্তানির এই হিসাব পাওয়া গেছে। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার। যদিও রপ্তানির হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং নমুনা (স্যাম্পল) রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। এই পরিমাণ অবশ্য খুবই কম হয়ে থাকে।
এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩৮২ ও আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এক হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৮৯ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে অস্থির দেশের ডলার বাজার। বিপুল অর্থ পাচার আর সিন্ডিকেটের কারণে ডলারের সংকট কাটছিল না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আমার ধারণা।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করার কারণে এখন থেকে ধীরে ধীরে রিজার্ভেরও উন্নতি হবে।’