ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের আরও একটি হার
প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ
প্রবাস নিউজ
প্রকাশিত : ০৩:৩৪ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৪ বৃহস্পতিবার
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। বুধবার (৯ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টাইগারদের ৮৬ রানে হারিয়েছে ভারত। এতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলো স্বাগতিকরা।
অভিষেক শর্মার বলে আউট হওয়র পর হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাওহীদ হৃদয়।
২২২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ১৪ রান নেয় বাংলাদেশ। তবে ঐ এক ওভারেই শেষ টাইগারদের দাপট। রানের হিসাব নাহয় বাদই গেল, দিল্লির এই ব্যাটিং উইকেটে ব্যাট হাতেও থিতু হতে পারেননি কোনও ব্যাটার। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকেন টাইগার ব্যাটাররা। ৮৩ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেনি তারা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
লক্ষ্যতাড়ায় নেমে তৃতীয় ওভারে আর্শদীপ সিংয়ের বলে বোল্ড হন পারভেস ইমন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলতে গিয়ে ইন সাইড এজে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে এই তরুণ ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৬ রান।
তিনে নেমে প্রথম দুই বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকান নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তিনিও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। পঞ্চম ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলে আউট হন লিটন দাসও। বরুণ চক্রবর্তীকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন লিটন।
তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিং তো হতাশা আরও বাড়িয়েছে। ৬ বল খেলে মাত্র ২ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। সপ্তম ওভারে পার্ট টাইম স্পিনার অভিষেক শর্মার বলে বোল্ড হন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬ বলে ১৬ রান করে রিয়ান পরাগের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন তিনি। পরের ওভারে মায়াঙ্ক যাদবের শিকার হয়ে আউট হন জাকের আলী অনিক।
রিশাদ হোসেনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ভরুণ চক্রবর্তীর বলে হার্দিক পান্ডিয়ার ক্যাচ হয়ে ফেরেন এই ব্যাটর। সাজঘরে ফেরার আগে রিশাদের ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ৯ রান।
এরপর তনজিম সাকিবকে নিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু নিতিশ কুমারের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে হার্দিকের হাতে ধরা পড়েন তানজিম। ফেরার আগে ১০ বলে ৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৪১ রান করে নিতিশের বলে রিয়ান পরাগের ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ভারতের হয়ে নিতিশ ও ভরুন চক্রবর্তী নেন দুটি করে উইকেট। এছাড়া আর্শদীপ সিং, ওয়াশিংটন সুন্দর, অভিষেক শর্মা, মায়াঙ্ক যাদব ও রিয়ান পরাগ নেন একটি করে উইকেট।
দিল্লির ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতের। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান এবং তানজিম হাসান সাকিবের তোপের সামনে পাওয়ারপ্লেতে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৫ রান করে ভারত।
মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম ওভারে ১৫ রান নেয় ভারত। তবে দ্বিতীয় ওভারে এসেই রানের লাগাম টেনে ধরেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ৫ বলে মাত্র ২ রান দিয়ে চাপ তৈরি করেন। চাপে পড়ে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে আউট হন তিনি। তাসকিনের স্লোয়ার বল মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিষেক শর্মা।
ভারতকে দ্বিতীয় আঘাতটা দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে মাঠে নামা এই পেসার প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই তুলে নিয়েছেন বিধ্বংসী ব্যাটার অভিষেক শর্মার উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তানজিমের ১৪৭ কিলোমিটার গতির বল তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন অভিষেক।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আউট হন ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সূর্য। ১০ বলে ৮ রান করেছেন বিধ্বংসী এই ব্যাটার।
পাওয়ারপ্লের পর সপ্তম ওভারটা একটু দেখেশুনে খেলেন নিতিশ কুমার এবং রিঙ্কু সিং। কিন্তু এরপরই শুরু হয় তাদের আক্রমণ। পরের তিন ওভারে এই দুই ব্যাটার মিলে নেন ৫০ রান। এর মধ্যে রিশাদ হোসেনের করা এক ওভারেই নিয়েছেন ২৪ রান। তাদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারের শেষে ১০১ রান করে ভারত।
৩৪ বলে ৭ ছক্কা ও ৪ চারে ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ১৪ তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে ফেরেন নিতিশ কুমার। নতুন ব্যাটার হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়া যখন আসেন তখন ১৩ ওভার ৩ বলে ভারতের স্কোর ৪ উইকেটে ১৪৯ রান।
হার্দিক এসেও রানের ধারা অব্যাহত রাখেন। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন রিঙ্কু সিং। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ২৯ বলে ৫৩ রান করে তাসকিনের বলে আউট হন তিনি।
শেষদিকে হার্দিক পান্ডিয়া এবং রইয়ান পরাগের ক্যামিও ইনিংসে ২২১ রান করে ভারত। ১৯ বলে ৩২ রান করেছেন হার্দিক। পরাগ করেছেন ৬ বলে ১৫।
বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ। ব্যাটিং স্বর্গে ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। তবে বল হাতে কিছুটা খরুচে ছিলেন এই লেগ স্পিনার।