যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা শিগগিরই মিলছে না

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ০৫:১৬ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শ্রম অধিকারসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটির বাজারে শিগগিরই জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে বিশ্বব্যাংক ২৫ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বুধবার বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভার এক ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। তারা জানিয়েছে, এ বিষয়ে অনেক ইস্যু রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার, শ্রম মানসহ বেশ কিছু বিষয়ের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট নয়। এসব ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। তাই বিষয়টিতে আরও কিছুটা পর্যালোচনা করবে। দেশটিতে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টি কোনো ইস্যু নয়, তারা সব সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 

উল্লেখ্য, জিএসপি বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। অবশ্য দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এই জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও পরের বছর রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (এএফএল-সিআইও) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়। 
বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার সময় ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা বাস্তবায়িত হলে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করার কথাও বলা হয়। এসব শর্তের অধিকাংশই পূরণের দাবি করে ২০১৫ সাল থেকে টিকফা বৈঠক, পার্টনারশিপ ডায়ালগসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশ জিএসপি পুনর্বহাল চাইলেও তাতে সম্মতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। 
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ওপেকসহ বিভিন্ন সংস্থা অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক। সংস্কার কর্মসূচির বাইরেও আইএমএফ অর্থ দিতে চেয়েছে। বাংলাদেশ তাদের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। এ ছাড়া বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২৫ কোটি ডলার অনুদান দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। 
দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আরও একটু সময় লাগবে। ইতোমধ্যে মুদ্রানীতি সংকোচন করা হয়েছে। কিন্তু অনেক দিন সুদহার নয়-ছয়ের ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এর আড়ালে অনেক অর্থ চলে গেছে। এতে বড় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা অর্থ পায়নি।  এসএমইদের জন্য আরও অর্থ সরবরাহের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও ওপেককে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় অনেক টাকা ছাপানো হয়েছে। ডলারের অস্থিতিশীলতাও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। এখন গভর্নর আর টাকা ছাপাতে রাজি নন, এটা যৌক্তিক। 

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ডলার পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। গত সরকার অনেক বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেনি। সম্প্রতি এসব ঋণের প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক ডলারও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে নেওয়া হয়নি। আরও প্রায় ৪০ কোটি ডলার শোধ করতে হবে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ভালো, আমদানিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। 
বাজেট সংশোধন সংক্রান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিচালন বাজেট কমানোর তেমন সুযোগ নেই। তবে উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনা হবে। গত অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। আইএমএফের পরামর্শ হচ্ছে, এটি আরও কমাতে হবে। চলতি অর্থবছরে এটি ৩ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। 
শেয়ারবাজার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা সব অনিয়ম খুঁজে বের করবে। তা ছাড়া আগামীতে বাজারের উন্নয়নে বেশ কিছু সংস্কার করা হচ্ছে। এতে সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল বয়ে আনবে। বিএসইসির সাবেক দুই চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হয়ে এরা কী করে গেছেন? কয়েকটি দেশে রোডশোর নামে যা-তা করা হয়েছে। কার কার কাছ থেকে টাকা ওঠানো হয়েছে, তার কোনো হদিস নেই। অদ্ভুত ব্যাপার।