সৌম্যরা যেভাবে বারবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন!
প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ
প্রবাস নিউজ
প্রকাশিত : ১২:৪৮ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার
একটা সময় তিনি তিন ফরম্যাটেরই প্রায় অপরিহার্য্য সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি’তে প্রায় অটোমেটিক চয়েজ ছিলেন সৌম্য সরকার। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময়টায় এ বাঁ-হাতি মারকুটে ব্যাটারকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াড কল্পনাও করা যায়নি।
সঙ্গে ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেস্টেও বিশেষ বিবেচনায় থাকতেন সৌম্য। সেটা ওপেনার না হলেও মিডল ও লেট অর্ডার হিসেবে। তারপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছেন। পরের ৩ বছর ধরে টেস্ট দলের বাইরে সৌম্য।
একইভাবে কিন্তু ২০২০ সাল থেকে হঠাৎ খারাপ খেলতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পারফরম্যান্স খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে। রান করতেই যেন ভুলে গেলেন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মোটামুটি অবস্থান ছিল। আছে। এ বছর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন সৌম্য সরকার।
যদিও খারাপ খেলার কারণে ২০২১ এর মার্চ থেকে ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭ মাস ওয়ানডে দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। এরপর থেকে আর নিয়মিত হতে পারেননি এ বাঁ-হাতি ব্যাটার।
যদিও ২০২৪ সালের মার্চে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে সিরিজটি খেলেছেন। সেখানে ২ ম্যাচের একটিতে (৬৬ বলে ১১ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৬৮ রান) হাফ সেঞ্চুরি উপহার দিলেও অপরটি তিনরানে আউট হয়েছেন।
এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আবার দলে ফিরলেন সৌম্য। যেহেতু ৮ মাস আগে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে দলে ছিলেন, তিন ম্যাচের একটিতে ১০০ প্লাস স্ট্রাইকরেটে হাফ সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন, তাই তার দলভুক্তি নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা-বার্তা শোনা যায়নি। তীর্যক সমালোচনাও হয়নি।
তারপরও প্রশ্ন জাগে, ঘুরেফিরে আবার কেন সৌম্য সরকারকেই ডাকতে হলো? আর কাউকে কি চোখে পড়েনি নির্বাচক প্যানেল বা টিম ম্যানেজমেন্টের? সংশ্লিষ্টদের কাছে এর কোন সদুত্তর আসলে নেই। কারণ, নতুন কেউ উঠেও আসেননি। তাই ঘুরে ফিরে লিটন দাস, সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাইম শেখ, সাইফ হাসান, তানজিদ তামিম কিংবা পারভেজ ইমনদেরকে দলে ডাকা হয়।
ওপরে যাদের নাম বলা হলো, তারা কিন্তু কেউ ঘরোয়া আসরগুলোয় রানের নহর বইয়ে দেননি। একের পর এক সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরিও হাঁকাননি। তাই তাদের না নিয়ে উপায় নেই। আসলে ব্যাপারটা তেমন নয়। তারা কেউই ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন সফল পারফরমার নন।
কিন্তু চরম সত্য হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটে অত ভাল না খেলেও তারা ঘুরেফিরে ঠিকই আবার জাতীয় দলে ফেরেন এবং ফিরে আবার কিছুদিন অল্প কিছু ম্যাচ খেলেন। কিন্তু তাতে ভাল করতে না পেরে আবার বাদ পড়েন। এরপর কিছুদিন বাইরে থেকে আপনা-আপনি আবার জাতীয় দলে ডাক পান- এভাবেই চলছে মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেট।
এই আপনা-আপনি বলতে কি বোঝানো হলো? মূলতঃ বাংলাদেশের জাতীয় দলের পাইপলাইন প্রায় শূন্য। নতুন নতুন প্রতিভা কম। তাই ঘুরে ফিরে পুরোনদের নিতে হয় এবং পুরোনদেরও ভাল খেলার খুব দরকার পড়ে না।
২-৩ সিরিজ পর মূল্যায়ন করা হয় কে কে খাপ খেলছেন এবং দলের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন ? তখন হিসেব কষা হয় এই সিরিজগুলোয় কে বেশী খারাপ খেলেছেন ? কার ব্যাটিংয়ের অবস্থা খুব বেশী খারাপ ছিল? কে বা কারা একদমই রান পাননি? এই খারাপ খেলার প্রতিযোগিতায় যে বা যারা একটু কম খারাপ খেলেছেন, তাদের তখন নতুন করে বিবেচনায় আনা হয়।
আর ঐ সব পারফরমাররাও জেনে বুঝে গেছেন , আমাকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভাল খেলতে হবেনা। এবং ঘরোয়া ক্রিকেট আসরগুলোয় খুব ভাল খেলারও দরকার নেই। ঘরে বসেই আবার জাতীয় দলে চান্স পেতে পারি। খালি আমার জায়গায় যে বা যারা জাতীয় দলে খেলছে , তারা আমার চেয়ে একটু বেশী খারাপ খেলুক। ব্যাস , আবার ডাক চলে আসবে। এভাবেই চলছে দিন। মাস। বছর।
কিন্তু কতকাল?