বাংলাদেশের আবেদনের ব্যাখ্যা চায় মালয়েশিয়া
প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ
প্রবাস নিউজ
প্রকাশিত : ১১:১৪ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
মানবপাচারে জড়িত দুই ব্যবসায়ীকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ যে অনুরোধ করেছে তার ব্যাখ্যা চায় মালয়েশিয়া। ফ্রি মালয়েশিয়া টু ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বলেছেন বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডির প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম এবং তার সহযোগী রুহুল আমিনকে প্রত্যর্পণের অনুরোধের যে উদ্দেশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা স্পষ্ট করতে বলেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন।
রোববার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল সাংবাদিকদের বলেন, আমিনুল ও রুহুলকে কি শুধু তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না কি তাদের আদালতে অভিযুক্ত করা হবে বাংলাদেশের সেটা পরিষ্কার করা উচিত। প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। যদি বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হয় তদন্ত করা, তাহলে তাদের উচিত পারস্পরিক আইনি সহায়তা চ্যানেল ব্যবহার করা। আর যদি বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হয় এই ব্যক্তিদের আদালতে অভিযুক্ত করা, তাহলে তাদের বলা উচিত এটাই প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্য।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে তবেই কেবল তাদের প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রত্যর্পণের অনুরোধ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও পুলিশের আইজিপির সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে আলোচনা করেছেন এবং আইজিপি বিষয়টি সামাল দেবেন এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান তিনি।
গত ২৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ পুলিশ। দুজন অভিযুক্তের একজন মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতুক সেরি আমিনুল ইসলাম। আরেকজন ঢাকার জনশক্তি ব্যবসায়ী ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনেও এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা আমিনুলের মালয়েশিয়ান পাসপোর্ট তথা নাগরিকত্ব রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কারিগরি পদ্ধতি সরবরাহ করে তার প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট।
বাংলাদেশ পুলিশ আমিনুলের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএনের সফটওয়্যার ব্যবহার সাময়িক বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানিয়েছে। বেস্টিনেট সম্প্রতি মালয়েশিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় বছরের চুক্তি করেছে।
গত জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি জানায়, এফডাব্লুসিএমএসে বেস্টিনেটের ২৪ জন অননুমোদিত ব্যবহারকারী বিদেশিকর্মী নেওয়ার আবেদন অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত। ২০২২ সালের অডিটর-জেনারেলের প্রতিবেদনেও দেখা যায় কর্মী নেওয়ার পদ্ধতিতে সরকার ও বেস্টিনেটের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না।
এদিকে আমিনুলকে নিয়ে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বুধবার (৬ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার জাতীয় পত্রিকা মালয় মেইলের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আমিনুল বা বেস্টিনেট মানবপাচারে জড়িত নয়, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আমিনুলের আইনজীবী শিবনান্থন এক বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করেছেন, আমিনুল বেস্টিনেটের একজন শেয়ারহোল্ডার এবং তিনি মালয়েশিয়ার একটি প্রযুক্তি কোম্পানি ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) সরকারি অনুমোদনের অধীনে পরিচালনা করে।
অপর অভিযুক্ত রুহুল আমিন স্বপনের মন্তব্য জানতে তার প্রতিষ্ঠান ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে ব্লুমবার্গ। ঢাকাভিত্তিক এই রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন রুহুল আমিন স্বপন।
ক্যাথারসিসের একজন প্রতিনিধি ইমেইলে ব্লুমবার্গকে জানান, রুহুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তিনি সবসময় ‘আইন মেনে, বৈধভাবে ও নৈতিকতার সাথে’ ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান ব্লুমবার্গকে বলেন, অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ীকে সর্বশেষ কুয়ালালামপুরে দেখা গেছে। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন এবং বাংলাদেশ পুলিশকে তাদের প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধপত্র জমা দিতে বলেছেন। বর্তমানে এসব নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।