ফেব্রুয়ারি-মার্চে আসবে আইএমএফের ঋণের ১.১ বিলিয়ন ডলার

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ১২:০৬ এএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ বুধবার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ঋণ সহায়তার চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ মিশন আসছে, এটা একটি রিভিউ মিশন। আমাদের আইএমএফের যে প্যাকেজ আছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, আমরা যেটা পেয়েছি, এখন ফোর্থ চান্স (চতুর্থ কিস্তি)। এটা আমরা আশা করছি ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। যাই হোক ওরা দেখে রিপোর্ট করবে।

তিনি বলেন, ওরা এখন আসছে মেইলি রেভিনিউ সেক্টরটা দেখার জন্য। সেই সঙ্গে ফিসক্যাল ডেফিসিট, বাজেটের কী টার্গেট হবে, গ্রোথ, ইনফ্লেশন- এগুলো দেখার জন্য। কী কী পদক্ষেপ আমরা এ পর্যন্ত নিয়েছি এবং কী কী নেবো, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করবে ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসেনি, তবে এখন সময় বিনিয়োগের। আপনারা দেখবেন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো ওঠানামা করছে না। ব্যাংক খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডি সাপোর্ট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংকে কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলাসী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকেও আস্তে আস্তে ফিরে আসবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম আছে। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশেনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি কী করা যায়। তারা আমাদের এখানে থাকবে কিছু দিন। আমরা তাদের বলেছি আমরা এমন কিছু নেবো যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আমরা এমন কিছু নেবো না যেটা নিজের....। যাতে আগামী সরকারে যেই আসুক তারা যেন সেটা ফলো করে আমরা কতটুকু নেবো এবং সেটা বিবেচনা করে ভেবে চিন্তে নেবে।

তিনি বলেন, তারা কতগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে সেটা আমরা পূরণ করতে পারবো কি না সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে।

অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলবো। চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে তো আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে যেমন ব্যাংক খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে ফান্ড লাগবে।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় যে কথা বলে আসছি সেখানে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের জন্য ছয় বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেক ফান্ড- সব মিলিয়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের আশা। সেখান থেকে পাবো কত সেটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গে কথা হচ্ছে। কিছু দিন পর এডিবি আসবে, ওপেক ফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলার পাবো। কারণ আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো এক-দুই বিলিয়নে চলে আসবে না। একেকটা ৪০০ ধেকে ৫০০ মিলিয়নের প্রকল্প। তবে পুরো টাকা এক বছরে আসবে না।

চলমান ঋণ সহায়তার আওতায় ৪ দশমিক ৭ বিলিয়নের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ৩ বিলিয়ন চলে আসবে। বাকি যেটা সেটাতো ২০২৬ পর্যন্ত যাবে না, তখন কী করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইএমএফ আগামী মার্চে আবার আসবে। ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার তো ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে চলে আসবে। এর পরেরটার জন্য মার্চ মাসে রিভিউতে আসবে আইএমএফের প্রতিনিধি দল।

শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফের সাথে কোনো আলোচনা হয়নি।

বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকায় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামী আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে।