বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ইফতার আয়োজন আবুধাবির গ্র্যান্ড মসজিদে

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রবাস নিউজ

প্রকাশিত : ১২:৪২ এএম, ৯ মার্চ ২০২৫ রোববার

এক অভাবনীয় দৃশ্য। সুদৃশ্য মসজিদের চারপাশে ৩০ একর বিস্তৃত আঙিনাজুড়ে সারিবদ্ধভাবে ইফতারে বসেছে পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষ। মদিনার পর এটিই একসঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ইফতার আয়োজন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চলছে ইফতার আয়োজন। এখানে প্রতিদিন ৩৫ হাজারেরও বেশি রোজাদার বিনামূল্যে ইফতার করেন।

দেশটির স্থপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে ১৯৯৬ সালে আবুধাবিতে ৩০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ যায়েদ মসজিদ। সৌন্দর্য ও বিশালতায় বিশ্বের শীর্ষ দশ মসজিদের মধ্যে অন্যতম এই শেখ যায়েদ মসজিদ। এখানে ৪২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। রয়েছে সব আধুনিক সুবিধা।

ইফতারের দুই ঘণ্টা পূর্বে রোজাদাররা আসতে শুরু করেন। পরিবহন নির্ভর এই শহরে মসজিদের চারদিকের রাস্তায় দীর্ঘ লাইনে সারিবদ্ধভাবে গাড়ি আসতে থাকে। মহিলা রোজাদারদের ১ হাজার ৫শ সহ মোট ৮ হাজার ৩৭৯টি পার্কিং স্পেস নির্ধারণ করা আছে। ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য রয়েছে আরও ৭০টি চার্জিং পয়েন্ট। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, অভ্যর্থনা, দিকনির্দেশনা থেকে খাবার পরিবেশন পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে একদল প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল নিরলস পরিশ্রম করেন।

ধনী-গরিব বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শামিল হয় এই আয়োজনে। আমন্ত্রিত মেহমান, বিদেশি কূটনৈতিক ও বিশিষ্ট সম্মানিত মানুষের পৃথক জোন, রয়েছে পরিবার, স্ত্রী-সন্তান, বয়স্ক-বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে ইফতারের ফ্যামিলি জোন। অনেক মানুষের সঙ্গে দোয়া করলে কবুল হয় এই আশায় ধনী-গরিব, শ্রমিক-পেশাজীবী একইসঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। দেশটির রাজপরিবারের সদস্যরা শামিল হন সাধারণ মানুষের সারিতে।

কখনো দেশটির প্রেসিডেন্ট সবাইকে চমকে দিয়ে জনসাধারণের কাতারে বসে খাবার গ্রহণ করেন। প্রত্যেকের জন্য সুদৃশ্য বক্সে খাবার পরিবেশন করা হয়। খেজুর, আপেল, কমলা, কলা ছাড়াও বিরিয়ানি, সালাদ, সবজি, স্যুপ দেওয়া হয়। পানীয় হিসেবে পরিবেশন করা হয় ফলের জুস, দুধ ও বোতলজাত পানি।

জানা যায়, এ মসজিদের ইফতার আয়োজনে প্রতিদিন ব্যবহার করা ১২ টন মুরগির মাংস, ছয় টন ভেড়ার মাংস এবং অন্য দ্রব্যাদি। যেমন- চাল, সবজি, টমেটো ও পেঁয়াজ মিলিয়ে ৩৫ টন। আর এত বড় আয়োজনে শেফ ও রান্নার সহকর্মীদের তালিকাও অনেক দীর্ঘ। তাদের পরিশ্রমও সীমাহীন। ইফতার আয়োজনটি সফল করার জন্য প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব এবং হোটেলের প্রায় এক হাজার কর্মী। এ ইফতার প্রস্তুতকারী দলের মধ্যে রয়েছেন ৩৫০ জন শেফ, ১৬০ জন স্টুয়ার্ড এবং ৪৫০ জন সেবাদানকারী কর্মী। তারা দেশের স্বাস্থ্যবিধি মেনে একত্রিত হয়ে প্রতিদিন ইফতার তৈরি করে আসছেন মসজিদটির জন্য।

আবুধাবির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব ও হোটেলের নির্বাহী শেফ কারস্টেন গটসচাল্ক বলেন, প্রতিদিনই ইফতারের এক ঘণ্টা আগে থেকে রোজাদারদের সামনে আমরা খাবারের বাক্স বিতরণ করি। আমরা খাবারের মান উন্নত করেছি। পাশাপাশি বাক্সসহ রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশন করছি। বিতরণের জন্য দেশের রেড ক্রিসেন্টের এক হাজার ৫শ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন বলে তিনি জানান।

আবুধাবির বাংলাদেশি কমিউনিটির সাহিত্য সংগঠক আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন, আমি ভাগ্যবান যে, এতো বড় একটি মাহফিলে আমার ইফতার করার সুযোগ হলো। যেখানে ধনী গরিব সব শ্রেণিপেশার মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করছে। জীবনে হয়তো এত বড় সুযোগ আর নাও পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আবুধাবিতে নির্মাণশ্রমিকের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশের আব্দুর রহিম বলেন, আমার কর্মস্থল শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের কাছে। তাই রোজা এলে প্রায় প্রতিদিনই দেশের সবচেয়ে বড় এ ইফতার আয়োজনটিতে অংশ নেই। খোলা আকাশে এখানের খাবার অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া খাবার দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেক সুন্দর।

গত বছর রমজান মাসে মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৪ হাজার ১৭০ জন। যার উল্লেখযোগ্য মানুষ মুসলিম রোজাদার। তাছাড়া আকর্ষণীয় গঠনশৈলী ও সৌন্দর্যের কারণে বহু অমুসলিম পর্যটক মসজিদটি দেখতে আসেন।