বইয়ের মোড়কে বাড়ির দেয়াল!
প্রবাস নিউজ ডেস্ক :
প্রবাস নিউজ
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোববার
আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে অনেক বইপ্রেমীদের কথা শুনেছি। কিন্তু এরকম বইপ্রেমী হয়তো এই প্রথম শুনছি যিনি বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে নিজের বাড়ির বিশাল দেয়াল দেশি-বিদেশি বিখ্যাত সব বইয়ের মোড়কের আদলে সাজিয়েছেন। ছবি দেখলে মনে হবে, এটি কোনো বাড়ির দেয়াল নয়, কোনো একটি লাইব্রেরির বইয়ের তাক।
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কালেখাঁর ভান্ডা গ্রামে গিয়ে দেখা মিলেছে এমনই একটি বাড়ির। যে বাড়িটি তৈরি করেছেন রাকিব ভূইয়া নামের এক তরুণ। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী। তাঁর বাবা শামছুল হক ভূইয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন।
বাড়ি তৈরির এই ব্যাতিক্রম আইডি সম্পর্কে জানতে ভোরের কাগজের সাথে কথা হয় রাকিব ভূইয়ার।
রাকিব ভূইয়া ভোরের কাগজকে জানান, বই পড়ার শিক্ষাটা পারিবারিক ভাবেই পাওয়া। তাদের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যেরই বইয়ের প্রতি আছে নিবিড় সম্পর্ক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবাই উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে এক ভাইয়ের লেখালেখির অভ্যাসও আছে, বেশকিছু বইও প্রকাশ হয়েছে। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বা বই প্রেম থেকে নিজ বাড়ির বই গ্যালারি লাইব্রেরিতে পরিণত হয়েছে। সংগ্রহে রয়েছে আছে হাজার বইয়ের বিশাল সংগ্রহ।
তবে কি বই প্রেম থেকে বাড়ির দেয়াল বইয়ের আদলে তৈরি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিব ভূইয়া জানান, বইয়ের প্রতি ভালোবাসাতো এখানে অবশ্যই কাজ করেছে। কিন্তু বইয়ের আদলে বাড়ি তৈরির এই আইডিয়াটা এসেছে ২০১৫ সালের জাতীয় বইমেলা থেকে। সেই বছর বইমেলায় গিয়ে একটি প্রকাশনীর স্টল দেখে, বাড়ি তৈরির এ পরিকল্পনাটি মাথায় আসে। যার প্রেক্ষিতে বাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাড়ি তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি, তবে ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এটির নকশা ও নির্মাণে। এটি তৈরি করতে প্রথমে তিনি কোনো নির্মাণ শ্রমিক পাচ্ছিলেন না। অনেক ঘোরাঘুরি ও খোঁজাখুঁজি পর দেখা পান ঢাকার একজন ইঞ্জিনিয়ারের । যার এধরণের কাজ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে। পরবর্তীতে তার সাথে তার বাড়ি তৈরির আইডি শেয়ার করে বাড়িটি তৈরির ভরসা পান। এর পর গ্রাফিক্সে বাড়ির দেয়ালের ডিজাইন করেন তিনি নিজেই। এবং সেখানে কোন কোন বইয়ের নাম স্থান পাবে এটাও সিলেকশন করেন রাকিব ভূইয়া নিজে এবং বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন।
সেই সিলেকশনে স্থান পায় বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনী, পথের প্যাঁচালী, মেঘনাদবধ কাব্য, নরওয়েজিয়ান উড, দ্য কাইট রানার, একাত্তরের দিনগুলি, গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণার মতো দেশি-বিদেশি বিখ্যাত লেখকদের বিখ্যাত সব বই।
তার এই বাড়ির ছবি ইতোমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট হতে শুরু হয়েছে। তা দেখে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ ছুটে আসছেন বাড়িটি দেখতে। বাড়িটির সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এসব পোস্টে বইপ্রেমী রাকিবকে প্রশংসা ভাসাতে ভুলছেন না তারা।
এলাকাবাসী ও সচেতন মানুষের মতে একজন তরুনের এমন একটি বাড়ির দেয়াল তৈরির কাজটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বর্তমান সময়ে যখন মানুষ বই বিমুখ হয়ে পড়েছে, সেখানে একজন তরুণের বইয়ের প্রতি এমন ভালোবাসার বহির প্রকাশ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। তারা মনে করেন, এ বাড়ি দেখেতে প্রতিদিন যে তরুণ-তরুণীরা আসছেন, তাদের মধ্যেও বই পড়া ও বইয়ের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যা তাদের বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে।